Thursday, June 30, 2022

পবিত্র যিলহজ্ব মাসের আমল ও বিস্তারিত আলোচনা

৩০ জুন বৃহস্পতিবার যিলক্বদ মাসের ২৯ দিন শেষ হবে।
ঐ দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখতে হবে।




♦২) রোযা রাখবো কবে?
যদি চাঁদ ৩০ জুন সন্ধ্যায দেখা যায় তাহলে ঐ দিন রাতেই সাহরি খেয়ে ০১ জুলাই শুক্রবার থেকে রোযা রাখা শুরু করতে হবে।
(সেই ভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।)
আর যদি ৩০ তারিখ চাঁদ দেখা না যায় তাহলে ০১ তারিখ শুক্রবার রাতে সাহরি খেয়ে ০২ তারিখ শনিবার থেকে রোযা রাখতে হবে।
♦৩) কতগুলো রাখবো?
রোযা মোট ৯ টা (১~৯ যিলহজ্জ)। সবগুলো রাখাই উত্তম।
সব না পারলে সাধ্যমত রাখবেন।
অন্তত কিছু না হলেও শেষের দুটো রোযা ( ৮,৯ যিলহজ্জ) বা শেষ (৯ যিলহজ্জ) একটা রোযা রাখা উচিত।
এগুলো নফল রোযা।
কেউ না রাখলে গুনাহ হবে না।
কেউ আবার ভাববেন না যে রাখতেই হবে। আপনার ইচ্ছা, আপনি আপনার আখেরাত কেমন ভাবে গড়বেন।
যাদের রমজানের কাযা আছে তারা প্রথম ৭ টা কাযা রোযার নিয়তে আর শেষ দুটো নফলের নিয়তে রাখতে পারেন।।
♦৪) শুনেছি ঈদের আগের দিন রোযা রাখা হারাম?
ভুল শুনেছেন।
বছরের ৫ দিন রোযা রাখা হারাম।
শাওয়ালের ১ তারিখ (রোযার ঈদের দিন), যিলহজ্বের ১০, ১১, ১২, ১৩ তারিখ (কুরবানি ঈদের দিন ও পরের ৩ দিন)। মোট ৫দিন।
এছাড়া শুধু শুক্রবার একদিন ও শুধু শনিবার একদিন সাধারণ নফল রোযা রাখা নিষেধ।
তবে এর সাথে আরো একটি করে রোযা রাখলে রাখা যায়।
♦৫) আমি তো কুরবানী দিবো না তাহলে?
এই রোযা গুলো নফল।
কুরবানীর সাথে সম্পর্ক না।
আপনি রাখলে সওয়াব পাবেন।
না রাখলে সমস্যা নাই।
♦৬ ) শুনেছি যারা কুরবানী করবে তারা নখ চুল ইত্যাদি কাটবে না?
জী। যারা কুরবানী করবে তাদের জন্য সুন্নাত হলো যিলহজ্ব শুরুর পর থেকে কুরবানী না করা পর্যন্ত চুল নখ গুপ্তাঙ্গ পরিষ্কার না করা।
এজন্য যিলহজ্জ মাস শুরুর আগেই এই কাজ গুলো করে নিতে হবে।
যারা কুরবানী করবে না তারাও এই আমল গুলো করলে সোওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। নারী পুরুষ ছেলে মেয়ে সবাই করতে পারবে এই আমল।
এই আমল করতে চাইলে ৩০ জুন সন্ধ্যার আগেই সব কিছু পরিষ্কার করে নিতে হবে । আপনি সেই ভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।
♦৭) রোযা রাখতে গিয়ে যদি সাহরি খেতে না পারি?
সাহরি খাওয়া সুন্নাত।
ইচ্ছা করে ত্যাগ করা যাবে না।
যদি ঘুমের কারনে টের না পাওয়া যায় তাহলে কিছু না খেয়ে শুধু নিয়ত করে রাখলেই রোযা হবে।
নফল রোযা রাখছি বললেই হবে। অন্যদিকে রোযা রাখার জন্য সাহরি করলেই নিয়ত হয়ে যাবে (ইনশা আল্লাহ) মুখে না বল্লেও চলবে।
♦৮ ) আরাফার দুআ ও তাকবীরে তাশরীক কি?
আরাফার দুআ আরাফার দিনে পড়তে হয়। তবে সেটা অন্যান্য যে কোন সময়ও পড়া যাবে।
দুআ টি হলোঃ
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ
وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ
لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ
وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লহু
ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু
লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু
ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাই ইং কদির।
(আরবি উচ্চারণ কোন ভাষাতেই লেখা যায় না। এটা পড়ে শিখে নিবেন)
🚩এছাড়া নীচের তাসবীহটি বেশী বেশী পড়বেন।
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ وَسُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লহি ওয়াবিহামদিহি ওয়া সুবহানাল্লহিল আযীম ।
(আরবি উচ্চারণ বাংলা বা ইংরেজীতে সঠিক ভাবে লেখা যায় না।
কারো থেকে শিখে নিবেন)
♦আর তাকবীরে তাশরীক প্রত্যেক বালেগ পুরুষ ও নারীর উপর ফরয নামায শেষ করে একবার উচ্চস্বরে পড়া ওয়াজিব। নারীরা নিজে শুনতে পারবে এমন ভাবে পড়বে বেশি উচু স্বরে পড়বে না।
তাকবীর হলঃ
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أكْبَرُ،
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ،
وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ
ﻭ ﻟِﻠّﻪ الحَمْدُ
আল্লহু আকবার আল্লহু আকবার
লা-ইলাহা ইল্লাল্লহু
ওয়াল্লহু আকবার আল্লহু আকবার
ওয়ালিল্লাহিল হামদ
(আরবি উচ্চারণ বাংলা বা ইংরেজী তে সঠিক ভাবে লেখা যায় না। কারো থেকে শিখে নিবেন)
♦কবে_কখন_পড়বেনঃ_______
0৯ যিলহজ্জ = ফজর যোহর আছর মাগরিব ইশা
১০ যিলহজ্জ = ফজর যোহর আছর মাগরিব ইশা
১১ যিলহজ্জ = ফজর যোহর আছর মাগরিব ইশা
১২ যিলহজ্জ = ফজর যোহর আছর মাগরিব ইশা
১৩ যিলহজ্জ = ফজর যোহর আছর..
সকল ওয়াক্তে ফরয নামাযের সালামের পরপর একবার পুরুষেরা উচ্চ স্বরে পড়বেন আর নারীরা নিজে শোনার মত পড়বেন।
সুন্নাত নফল ওয়াজিব নামাযে পড়া লাগবে না।
♦১০) মহিলাদের কি কুরবানী করতে হয়?
জী। কুরবানীর শর্ত পূরণ হলেই করতে হবে।
যদি সোনা রূপা ও নগদ অর্থ আলাদা ভাবে বা এক সাথে ৪৩০০০ টাকা বা এর বেশি হয় তাহলে কুরবানী করতে হবে।
এটা আনুমানিক হিসাব বললাম।
বাজার থেকে ৫২.৫ ভরি রূপার বিক্রয় দাম জেনে নিবেন।
♦৯) ঈদ কবে হবে?
যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদ হয়।
চাঁদ দেখার পর হিসাব করলেই পাবেন।
১০ জুলাই বা ১১ জুলাই যে কোন একদিন হবে।
♦১০) এখন কি যাকাত দেওয়া যাবে?
জী যাবে। যাকাত যে কোন সময় দেওয়া যায়।
যার যাকাত যখন ফরয হয় তখন দিয়ে দেওয়াই উত্তম।
♦১১) আরাফার রোযা কবে?
আরাফার রোযা ঈদের আগের দিন।
বাংলাদেশে ঈদ সৌদির একদিন পরে হয়।
তাই আলেমগণ বলেন ঈদের আগের দুই দিন রোযা রাখতে।
০৯, ১০, ১১ জুলাই এর যে কোন দুই দিন হবে আরাফার রোযা।
♦১২) যারা অন্য দেশে থাকে তারা কবে রোযা রাখবে?
যার যার দেশের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে রাখবে।
এজন্য চাঁদ কবে উঠছে খেয়াল রাখতে হবে।
সাহরি ও ইফতারের সময়সূচী অনলাইন বা গুগল থেকে জেনে নিবেন।
লেখা সংগৃহীত 🌸
🪷১. তাওবা:
তাওবা অর্থ ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানি থেকে ফিরে আসা, আল্লাহর হুকুমের পাবন্দি করার উপর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা এবং অতীতের কৃত কর্মের উপর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে আর কখনো আল্লাহর নাফরমানি না করা ও তার হুকুমের অবাধ্য না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা। এ দিন গুলোতে তাওবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَئَِّاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ يَوۡمَ لَا يُخۡزِي ٱللَّهُ ٱلنَّبِيَّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥۖ نُورُهُمۡ يَسۡعَىٰ بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَبِأَيۡمَٰنِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَتۡمِمۡ لَنَا نُورَنَا وَٱغۡفِرۡ لَنَآۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٨ ﴾ [التحريم: ٨]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর—বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সে দিন আল্লাহ লজ্জা দেবেন না নবীকে এবং তাঁর মুমিন সঙ্গীদেরকে, তাঁদের জ্যোতি তাঁদের সম্মুখে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’[1]
🪷২. ফরয ও নফল সালাতগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা:
অর্থাৎ ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা, যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তার সুন্নত, মুস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। ফরয সালাতগুলো সময় মত সম্পাদন করা, বেশি বেশি করে নফল সালাত আদায় করা। যেহেতু এগুলোই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার সর্বোত্তম মাধ্যম। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তুমি বেশি বেশি সেজদা কর, কারণ তুমি এমন যে কোনো সেজদাই কর না কেন তার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করবেন। [মুসলিম] এটা সব সময়রে জন্য প্রযোজ্য। নিয়মিত ফরয ও ওয়াজিবসমূহ আদায়ে যত্নবান হওয়া- অর্থাৎ, ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তার সুন্নত, মুস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। হাদিসে এসেছে—
عن أبي هريرة- رضى الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله تعالى قال: «من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب، وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضته عليه، وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، وإن سألني لأعطينه، ولئن استعاذ بي لأعيذنه ، وما ترددت عن شيء أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن ، يكره الموت وأنا أكره مساءته». رواه البخاري
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার প্রতি কষ্টদায়ক বস্তু দিতে অপছন্দ করি।’[2]
🪷৩. সিয়াম পালন:
যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যেহেতু অন্যান্য নেক আমলের মধ্যে সিয়ামও অন্যতম, তাই এ দিনগুলোতে খুব যত্নসহকারে সিয়াম পালন করা।
عن حفصة- رضى الله عنها- قالت: أربع لم يكن يدعهن النبي- صلى الله عليه وسلم-: صيام عاشوراء، والعشر، وثلاثة أيام من كل شهر والركعتين قبل الغداة . رواه أحمد، والنسائي صحيح سنن أبي داود، صحيح سنن النسائي
হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল: আশুরার সওম, যিল হজের দশ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সওম, ও জোহরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত।[3]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«ما من عبد يصوم يوماً في سبيل الله إلا باعد الله بذلك اليوم وجهه عن النار سبعين خريفاً »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে, একদিনের রোজার বিনিময় তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর খারিফ দূরে রাখবে”[4]।
🪷৪. হজ ও ওমরা করা:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। এ দুটি ইবাদতে রয়েছে পাপের কুফল থেকে আত্মার পবিত্রতা, যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:—
«من حج فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه »
‘যে ব্যক্তি হজ করেছে, তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোনো পাপে লিপ্ত হয় নি সে সে দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে গেল, যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছে।’[5]
হাদিসে আরও এসেছে—
عن أبي هريرة- رضى الله عنه- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجـنة ».
رواه البخاري ، ومسلم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘এক ওমরাহ থেকে অন্য ওমরাহকে তার মধ্যবর্তী পাপসমূহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর কলুষযুক্ত হজের পুরস্কার হল জান্নাত।’[6]
🪷৫. আল্লাহর যিকির করা:
এ দিনসমূহে অন্যান্য আমলের মাঝে যিকিরের এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, যেমন হাদিসে এসেছে:—
عن عبد الله بن عمر- رضى الله عنهما- عن النبى- صلى الله عليه وسلم- قال: «ما من أيام أعظم عند الله ولا أحب إليه من العمل فيهن من هذه العشر، فأكثروا فيهن من التهليل والتكبير والتحميد ».]رواه أحمد، وقال أحمد شاكر:إسناده صحيح [
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এ দশ দিনে [নেক] আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অধিক প্রিয় ও মহান আর কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] তাকবীর [আল্লাহু আকবার] তাহমীদ [আল-হামদুলিল্লাহ] বেশি করে আদায় কর।[7] আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:—
﴿ لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ٢٨ ﴾ [الحج : ٢٨]
‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’[8]
অধিকাংশ আলেম বলেছেন: এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে যিলহজের প্রথম দশ দিনকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ সময়ে আল্লাহর বান্দাগণ বেশি বেশি করে আল্লাহর প্রশংসা করেন, তার পবিত্রতা বর্ণনা করেন, তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন, কুরবানির পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করে থাকেন।
হাদিসে আছে চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। ১-সুবহানাল্লাহ, ২-আলহামদু লিল্লাহ, ৩-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ৪-আল্লাহু আকবার। এ দিনগুলোতে এ যিকিরগুলো করা যেতে পারে।
🪷৬. তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ:
এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহত্ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। এ তাকবীর প্রকাশ্যে ও উচ্চস্বরে মসজিদ, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, বাজার সহ সর্বত্র উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা হবে। তবে মেয়েরা নিম্ন-স্বরে তাকবীর পাঠ করবে। তাকবীর হল:—
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও আবু হুরাইরা রা. যিলহজ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন। অর্থাৎ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই দুই প্রিয় সাহাবি লোকজনকে তাকবীর পাঠের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন।[9]
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ইবনে ওমর ও আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারের জন্য বের হতেন, মানুষরাও তাদের দেখে দেখে তাকবীর বলত। তিনি আরও বলেছেন, ইবনে ওমর মিনায় তাঁর তাঁবুতে তাকবীর বলতেন, মসজিদের লোকেরা শুনত, অতঃপর তারা তাকবীর বলত এবং বাজারের লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীর বলত। এক পর্যায়ে পুরো মিনা তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত।
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলতেন, প্রত্যেক সালাতের পর, বিছানায়, তাঁবুতে মজলিসে ও চলার পথে সশব্দে তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেহেতু ওমর, ইবনে ওমর ও আবূহুরায়রা সশব্দে তাকবীর বলেছেন।
🪷৭. আরাফার দিন রোজা রাখা:
হজ পালনকারী ছাড়া অন্যদের জন্য আরাফার দিন রোজা রাখা। আবু কাতাদাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার দিনের রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
«احتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده » .]...رواه مسلم [
আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, ইহা পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছররে গুনাহর কাফফারা হবে।[10]
🪷৮. কুরবানির দিন তথা দশ তারিখের আমল:
কুরবানির দিনের ফযিলত
▪️[১] এ দিনের একটি নাম হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু যবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদিসে এসেছে:—
عن ابن عمر- رضى الله عنهما- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوم النحر: [أي يوم هذا] ؟ قالوا: يوم النحر، قال: «هذا يوم الحج الأكبر».رواه أبو داود وصححه الألباني
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোনো দিন? সাহাবিগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। [আবু দাউদ: ১৯৪৫, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।]
▪️[২] কুরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। হাদিসে এসেছে—
عن عبد الله بن قرط عن النبي- صلى الله عليه وسلم- قال: «إن أعظم الأيام عند الله تبارك وتعالى: يوم النحر ثم يوم القر.» رواه أبو داود وصححه الألباني
আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট দিবসসমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কুরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।[11]
🪷৯. কুরবানি করা:
▪️কুরবানি কাকে বলে?
কুরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষে যবেহ করা।
ইসলামি শরিয়তে এটি ইবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত্য দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে:—
﴿ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও (পশু) নাহর (কুরবানি) কর।’[12]
﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [الانعام: ١٦٢، ١٦٣]
‘বল, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোনো শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’[13]
হাদিসে এসেছে:—
عن البراء بن عازب رضى الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من ذبح بعد الصلاة، فقد تم نسكه، وأصاب سنة المسلمين ». [روه البخاري ومسلم]
বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ঈদের সালাতের পর কুরবানির পশু যবেহ করল তার কুরবানি পরিপূর্ণ হল ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল।[14]
عن أنس بن مالك -رضي الله عنه- قال: ضحى النبي صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين، ذبحهما بيده، وسمى وكبر، ووضع رجله على صفاحهما [رواه البخاري ومسلم] وفي لفظ البخاري أقرنين قبل أملحين.
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে দুটি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কুরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন।[15]
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে এই উত্তম দিনগুলো মূল্যায়ন করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
📚রেফারেন্স:-
[1] সূরা তাহরীম, আয়াত: ৮
[2] বুখারি, হাদিস: ৬৫০২
[3] আহমদ: ৬/২৮৭, আবু দাউদ: ২১০৬, নাসায়ী: ২২৩৬
[4] বুখারী, ২৮৪০; মুসলিম: ১১৫৩।
[5] বুখারি: ১৪৪৯, মুসলিম: ১৩৫০
[6] বুখারি: ১৬৮৩, মুসলিম: ১৩৪৯
[7] আহমদ, হাদিস: ১৩২
[8] সূরা আল-হজ, আয়াত: ২৮
[9] বুখারি, ঈদ অধ্যায়
[10] মুসলিম: ১১৬৩
[11] আবু দাউদ: ১৭৬৫
[12] সূরা কাউছার, আয়াত: ২
[13] সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৬২, ১৬৩
[14] বুখারি: ৫৫৪৫, মুসলিম: ১৯১৬
[15] বুখারি: ৫৫৬৫, মুসলিম: ১৯৬৬

0 Comments: